শেকড়কে দূরে ঠেলে শেকড়ের সন্ধানে



দুর্ভাগ্য বা সৌভাগ্যক্রমেই হোক অথবা জীবনজীবিকার তাগিদেই হোক, প্রতিনিয়তই বাংলাদেশীরা বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। এদের অনেকেই একটা সময় পর স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করে, বংশবিস্তার করে। ভবিষ্যত প্রজন্মের সুখের জন্য অতীতের বাধনকে হাল্কা করে ফেলে। মা, মাতৃভূমির টান তখন কষ্টকরে হলেও অগ্রাহ্য করতে হয়। তবে ভেতরে বাংলাদেশকে নিয়ে চিন্তার অন্ত থাকে না। প্রবাসে দেশীয় অনুষ্ঠান গুলোতে এক দিনের জন্য হলেও পুরদস্তুর বাঙালি হয়ে উঠার নিরন্তর চেষ্ঠা চলে।

আসল কথায় আসি, এবার বাংলানববর্ষ উৎযাপন উপলক্ষ্যে বেশ কয়েকটি সংঘঠন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সৌভাগ্যক্রমে আমারও কয়েকটিতে উপস্থিত হবার সুযোগ হয়। মাথায় একটি প্রশ্ন ঘোরপাক থেকে থাকে। প্রবাসী হিসেবে আমি আমার ভবিষ্যত প্রযন্মকে অতীতের সাথে কতটুকু পরিচয় ঘটাতে পারছি। যদি নাই পারি তাহলে এই এক দিনের বাঙালি হয়ে লাভ কি? বাংলাদেশের অতীত, রীতি প্রথা নিয়ে কথা বলার অধিকারও নাই।


সেই কৌতুহল থেকেই অনেকগুলো প্রবাসী (!) বাচ্চা ছেলের তাদের দাদার নাম জানতে চাই। আমি পাল্টা প্রশ্ন শুনে আশ্চর্য হয়ে থ বনে যাই “দাদা কি?”বয়ষে বড় একটা ছেলে বুদ্ধি করে নিজেই দাদার নাম দিয়ে দিল। আর একজন একটু লজ্জা পেয়ে বলল - “দাদা আছে বাংলাদেশে, তবে নাম জানি নাকেউ বলেনি তো, তাই”।  


 ‘এশো হে বৈশাখ ... যাক পুরাতন স্মৃতি ... গানটা বাজতে ছিল। ছেলেপুলেদের কথাগুলো শুনে মনে হল নব প্রজন্ম যেন বৈশাখ আর পেছনের প্রজন্ম যেন পুরাতন স্মৃতি। অতীতকে মুছে ফেলার মত শেকড়কে দূরে ঠেলে আমরা কোন শেকড়কে সন্ধান করছি? প্রবীনের কাছ থেকে নবীনকে দূরে ঠেলে, গাছের মূলউতপাটন করে আদৌ কি গাছকে বাচিয়ে রাখা সম্ভব। তাহলে বাংলা নববর্ষ বা বৈশাখি উতসব আয়োজন করে বাঙ্গালিত্বের শেকড় খোজার কোন অর্থ আছে কি ?  দেশকে বিশ্বকে চেনার আগে আমাদের কি উচিত নয় নিজের পরিবারকে চেনা, নিজের শেকড়ের সন্ধান করা??

No comments

Theme images by merrymoonmary. Powered by Blogger.