চাকরি হারিয়ে দেশে ফেরত প্রবাসীদের পুনর্বাসন: মন্ত্রণালয়ের ঘুম ভাঙাবে কে ?

আসেপাশে প্রতিদিনই শুনতেছি সিঙ্গাপুর থেকে কাউকে না কাউকে ছাঁটাই করা হচ্ছে,  দেশে ফিরতে হচ্ছে কোন রকম পূর্বপরিকল্পনা ছাড়াই. যেমন -
1. মাসুম - সদ্য প্রবাসের খাতায় নাম লিখিয়েছে. এসেই পড়েছে মন্দার কবলে. ওভারটাইম নাই, শুনতে পাচ্ছে অনেক লোক ছাটাই হবে. নিজের বিদেশে থাকা না থাকা নিয়ে প্রতিনিয়তই উদ্বিগ্ন.
২. সুমন - ধার দেনা করে এজেন্ট ফি দিয়ে এক বছরের কাছাকাছি বিদেশে. এসেছিলো এক সাপ্লাই কোম্পানিতে তাই এখনো ঋণের বোঝা বইতেছে. কোম্পানি সাফ জানিয়ে দিয়েছে দেশে ফিরতে হবে বছর পেরুলেই. কোম্পানির নতুন কোন কাজ নেই, এবস্থায় নতুনদের কন্ট্রাক নবায়ন সম্ভব নয়. সুমন ভাবছে কিন্তু কোন কিছুতেই কুল কিনারা পাচ্ছে না.
3. রাতুল - প্রবাসে আছে ছয় বছর. বিয়ে করে আবার প্রবাসে তিন মাস হয়, তেলের দাম নিম্নমুখী তাই বিদেশী শ্রমিক কমিয়ে দিচ্ছে কোম্পানি. রাতুলকেও ফিরতে হবে. বিয়ে করতে মোটামুটি ভালো টাকাই খরচ করেছে. এখন দেশে যেয়ে কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না. বৌকে লোকজন অপবাদ দিবে বা তাকেও হয়তো বলবে বৌ পাগল তাই চলে এসেছে দেশে.
4. অৰ্ণৰ- বিদেশে প্রতিষ্ঠার আশায় কাজের পাশাপাশি পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছিল ভালো একটি ইউনিভার্সিটিতে. ডিগ্রী শেষ সেমিস্টার, বিদেশে যা আয় করেছে তার বেশির ভাগই ব্যায় করেছে পড়াশোনার পিছনে . বাড়িটিও ঠিকমতো মেরামত করে নি, এতে দেশে থাকা বন্ধুরা (মেয়ে নিয়ে ফুর্তি করে টাকা উড়িয়ে শেষ) কটূক্তি করতে দ্বিধা বোধ করেনি . ভেবেছিলো পড়াশোনা শেষে প্রতিষ্ঠিত হয়ে তার সমুচিত জবাব দিবে. কিন্তু হায় তাকেও ফিরতে হবে , খবরটা শুনে তার মাথা ঘুরছে, শরীর বেয়ে টপটপে ঘাম ঝরছে.
5. রিয়াজ - প্রবাসে এক যুগ পার করতেছে. ঢাকাতে বাড়ি জন্য প্রতি মাসে কিস্তি দিচ্ছে , আর এক বছর দিলেই সে ফ্ল্যাটের মালিক. দেশে ফেরতের খাতায় তার নামও. এখন উপায় ?
6. সমীর - প্রবাসে বিশ বছর পার করলো. বোনদের বিয়ে দিয়ে বাড়ি ঘর করতে করতে একটু বেশি বয়সেই বিয়ে করে. সঞ্চয় বলতে তাই ছেলেমেয়েরা এখনো ছোট. পঁচিশ বছর প্রবাসে কাটিয়ে দেশে ব্যবসা করতে নাম লিখায় শেষ সম্বলটুকু দিয়ে. কিছু বুঝে উঠার আগেই ব্যবসায় প্রতারণার স্বীকার হয়ে পথে বসে. এতো দিনে দেশের কিছু মানুষের নৈতিকতা বা মূল্যবোধ যে অনেক নীচে নেমে গেছে তা বুঝে উঠতে পারে নি.
7. রহমান - বিদেশে ভালোই আয় করতো, তাতে সংসার খরচও বেড়ে যায়. আত্নীয়স্বজনকেও অনেক সহায়তা করেছে. বিশ্বব্যাপী মন্দা তার ব্যবসাকেও আঘাত করে. এখন দেউলিয়ার পথে, ব্যাংক লোন কিভাবে পরিশোধ করবে সেই চিন্তায় ঠিক মতো খেতে ঘুমাতে পারছে না রহমান. অগ্যতা  পরিজনকে দেশে পাঠিয়ে নিজেও বাংলাদেশে থিতু হবার পরিকল্পনায়. কিন্তু কিভাবে কি ? পরিবার কি পারবে মানিয়ে নিতে?


এরকম অসংখ্য প্রবাসী প্রতিনিয়ত দেশে ফিরতেছে. সংখ্যাটা বহুগুনে বেড়েছে সিঙ্গাপুরের অর্থনীতির মন্থরগতির কারণে. বিগত বছরগুলোতে সিঙ্গাপুর ছিল রেমিটেন্সের বড় একটা খাত. এভাবে মন্দাবস্থা আরোও বছরখানেক প্রলম্বিত হলে হাজার হাজার প্রবাসীকে দেশে ফিরতে হবে. বিশেষত জাহাজ নির্মাণ এবং মেরামত শিল্পে কর্মরত প্রবাসীকে দেশে ফিরতে হচ্ছে গণহারে, ইমারত নির্মাণশিল্পের সংখ্যাটা নেহায়েতই কম নয়.

দুঃখের বিষয় এখনো পর্যন্ত প্রবাসী কল্যাণ বা শ্রম মন্ত্রণালয়ের ঘুম ভাঙেনি. এসকল প্রবাসীর পুনর্বাসন তো বহুদূর , প্রবাসীর বহর যে দেশের পথে তার তথ্য মন্ত্রণালয়ে আছে বলে সন্দিহান.এ হাজার হাজার প্রবাসীদের সাথে জড়িয়ে আছে লক্ষ পরিবার. তাই প্রবাসীদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করলে একদিকে যেমন পরিবারগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে অন্যদিকে বেড়ে যাবে অন্যান্য জটিলতা, অপরাধপ্রবণতা. দেশে বিদেশী বিনিয়োগ বাড়তেছে উল্লেখ্যযোগ্য হারে যা খুবই ভালো খবর. প্রবাসীদের সঠিকভাবে পুনর্বাসিত করা গেলে দেশের উৎপাদনক্ষমতা বাড়বে বহুগুন কারণ এদের আছে বিশেষ কর্র্মদক্ষতা, অভিজ্ঞতা.  তাই সময় থাকতে পদক্ষেপ নেওয়া অতীব জরুরি.

দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখা হাজার লক্ষ রেমিটেন্সের কারিগর প্রবাসীদের পুনর্বাসন নিয়ে কাজ করা সময়ের দাবি.  

1 comment:

  1. চাকরি হারিয়ে দেশে ফেরত প্রবাসীদের পুনর্বাসন: মন্ত্রণালয়ের ঘুম ভাঙাবে কে ? - Fortune Hunter >>>>> Download Now

    >>>>> Download Full

    চাকরি হারিয়ে দেশে ফেরত প্রবাসীদের পুনর্বাসন: মন্ত্রণালয়ের ঘুম ভাঙাবে কে ? - Fortune Hunter >>>>> Download LINK

    >>>>> Download Now

    চাকরি হারিয়ে দেশে ফেরত প্রবাসীদের পুনর্বাসন: মন্ত্রণালয়ের ঘুম ভাঙাবে কে ? - Fortune Hunter >>>>> Download Full

    >>>>> Download LINK

    ReplyDelete

Theme images by merrymoonmary. Powered by Blogger.