বিশ্বকাপ ফুটবল ও বাংলাদেশঃ উন্মাদনার কাছে দেশাত্ববোধ পরাভূত


লিপইয়ারের মতই ৪ বছর পর পর বাংলাদেশকে কিছুদিনের জন্য খুজে পাওয়া যায় না। ভিসামুক্ত বিশ্বের কোন এক কসমোপলিটান দেশ বলেই মনে হয়। চারদিকের নানান দেশের নানান পতাকা। বাংলাদেশিরা বাংলাতেই অন্যদেশের জন্য গলা ফাটাচ্ছে যেন ওটাই তার দেশ। সব পতাকার ভিড়ে দু’একটি বাংলাদেশী পতাকা দেখে মনে হতেই পারে “একদিন বাঙালি ছিলাম রে...”

বাংলাদেশে পতাকা উড়ানো নিয়ে আইনের বলবত থাকলেও তার প্রয়োগ নেই বললেই চলে। এমনও হতে পারে যে আইন প্রয়োগকারীদের বাসায়ই হয়তো উড়ছে অন্য দেশের পতাকা। তাছাড়া আমার দেশে আইন প্রয়োগকারীদের চেয়ে আইন প্রনেতারাই বেশী দক্ষ। তাইতো মন্ত্রীকে দেখা যায় প্রকাশ্যে ধুমপান করতে।










কিছু দিন আগে ভারত পাকিস্তানের পতাকা স্টেডিয়ামে উড়ানো নিয়ে অনেক কথা হল, অনেক বাদ- প্রতিবাদ হল, শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ ভিন্ন অন্যদেশের পতাকা বন্ধের জন্য প্রবেশ পথে রীতিমত তল্লাশি করা হল। আমাদের তো দ্বার খোলা, তাই ভ্রম স্টেডিয়াম পেরিয়ে সবার বাড়ি বাড়ি পৌছে গেছে। তাহলে এই আইন কি শুধু ভারত-পাকিস্তান আর শ্রীলঙ্কার পতাকার জন্য?? এমনকি যারা তখন অন্য পতাকার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল, তাদের অনেকেই এখন ভিন্ন দেশের সবচেয়ে বড় পতাকা টানানো নিয়ে প্রতিযোগিতায় নেমেছে।


















বিশ্বকাপ ফুটবল এক অন্যরকম আবেগ, উন্মাদনা নিয়ে আসে। তাই বলে সেই উন্মাদনায় গা ভাসিয়ে দিয়ে উন্মাদ হলে তো চলবে না। অন্যদেশের পতাকা ঊড়াতে যেয়ে মারা যাওয়া, ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা নিয়ে মারামারি মোটেই গ্রহন যোগ্য নয়, বিশেষত বাংলাদেশের মত একটা দেশে যার পতাকা পেতে রক্ত দিতে হয়েছে। বিশ্বকাপ নিয়ে যত মাতামাতি বাংলাদেশ, ততটা হয়না বিশ্বকাপ খেলুড়ে অনেক দেশেও।



















স্বাধীনতা বা বিজয়দিবস গুলোর মত জাতীয় দিবসগুলোতে (যখন আমরা খাটি বাঙালি হয়ে যাই, মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে গলা ফাটাই তখনোও) বাড়িতে বাড়িতে এত পতাকা, বাস্তায় এতো বড় পতাকা দেখা যায়না।









যেদেশে এখনো অসংখ্য লোকের, পথশিশুর পরার মত বস্র নেই, সেখানে অন্য দেশের পতাকা না উড়িয়ে, পতাকা নিয়ে প্রতিযোগিতা না করলে কি চলে না?? পতাকা কেনার টাকা দিয়ে পারি না কারও বস্ত্রের ব্যবস্থা করতে? তাতে যেমন অন্যের উপকার হবে তেমনি আমরা দেশের পতাকাও অবমাননার হাত থেকে রক্ষা পাবে। আইন রক্ষাকারী বাহিনীকে শুধু দোষারোপ না করে আমদেরও উচিত তাদের সহযোগিতা করা, আইনের প্রতি শ্রদ্ধশীল থাকা।


বিশ্বকাপ ফুটবলের উত্তেজনায়ও অটুট থাকুক আমাদের দেশাত্ববোধ, উত্তেজনার বহিঃপ্রকাশ যেন মাত্রা ছাড়িয়ে ব্যক্তি জীবনে কোন ঝুকি নিয়ে না আসে। বিশ্বকাপ ফুটবলের উন্মাদনার সাথে আমাদের দেশের ফুটবলের উন্নয়ন সাধনের উপায় ও কার্যকরি পদক্ষেপ বিশ্বদরবারে বাংলাদেশের পরিচিতি বৃদ্ধি পাবে। সেই দিনের অপেক্ষায় আছি, যেই দিন অন্য দেশে নয় বিশ্বকাপে বাংলাদেশ খেলবে এবং বাংলাদেশের পতাকা শোভিত হবে চারিদিক।


1 comment:

Theme images by merrymoonmary. Powered by Blogger.