ক্রিকেটার ও নির্বাচকদের বোধ উদয়ঃ বাংলাদেশীদের হৃদয়ের রক্তক্ষরন

বাংলাদেশে ক্রিকেট খেলার প্রচলন কবে থেকে তার সঠিক হদিস নেই। তবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ১ম খেলে ১৯৮৬ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। সে হিসেবে ইতিমধ্যে পার করে দিয়েছে ২৮ টি বছর। টি ২০ খেলেছে শুরু থেকেই। টেস্ট ক্রিকেট খেলছে ২০০০ সাল থেকে। জয়-পরাজয়ের পরিসংখ্যান মোটেও সন্তোষজনক নয়। বাংলাদেশকে নিয়ে তাই প্রায়ই বিশ্ব ক্রিকেটের অনেক দেশ, অনেক খেলোয়াড় বাজে মন্তব্য করে থাকে।

তবে একটা বিষয়ে পৃথিবীর সব ক্রিকেট খেলুড়ে দেশকেই অকপটে স্বীকার করতে হয় যে বাংলাদেশ সবাইকে পিছনে ফেলে ১ম স্থানেই আছে আর তা হল এদেশের ক্রিকেট প্রেমী। এতো হারের পরও নিয়মিত সাপোর্ট করে যায় এ ক্রিকেট প্রেমী জনতা। নীতিগতভাবে বলা যায় যে বড় দলের সাথে বাংলাদেশ হারতেই পারে কিন্তু হংকং , আফগানিস্তানের মত দলের সাথেও নাস্তানাবুদ হওয়া … এটা মেনে নেওয়া কষ্টদায়ক। এক ম্যাচ হারাকে আপসেট বলা যায় কিন্তু যখন হর হামেশাই এমন হতে থাকে তখন তা আর আপসেটের পর্যায়ে পরে না। কিন্তু তারপরও মাঠভরা দর্শক, নানা রঙের , নান বাদ্যযন্ত্রে গ্যালারি নাতিয়ে রাখছে সারাক্ষন।



ক্রিকেটই একমাত্র যায়গা যেখানে কোন দলভেদ নাই, যেখানে চার ছক্কার তালে তালে মাদ্রাসা পুড়য়া থেকে শুরু করে স্কুল কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া অথবা অক্ষরজ্ঞানহীন একসাথে নাচে। ক্রিকেটই সব ধর্মের মিলন ঘঠায় যখন দলের জয়ের জন্য যে যার মত প্রার্থনা করতে মগ্ন।



হৃদয়ের দহনটা তখন তীব্রতর হয় যখন দেখা যায় আমাদের ক্রিকেটাররা একই ভূল বার বার করে, যখন সহজ ক্যাচ ছেড়ে দেয়, যখন অকারনে উইকেট বিলিয়ে দেয়। ১১ নাম্বার প্লেয়ারও ছক্কা মারতে যেয়ে বল উপরে উঠিয়ে দিয়ে চলে আসে যেখানে অনেক ওভার বাকিই পরে থাকে।

তারা কি একবারও ভাবে না সেই ছেলে মেয়ে গুলোর কথা যারা তাদের সাধের জমানো টাকা খরচ করে টিকেট কেটে খেলা দেখতে যায়, দেশকে সমর্থন জোগাতে যায়; ভাবে না সেই সব মায়াবী মুখ গুলোর কথা যারা দেশকে পরাজিত হতে দেখে হাউমাউ করে কাদে; মনে করে না অই সকল বাচ্চা ছেলেগুলোর কথা যারা সারা গায়ে রঙ মেখে শীতের সন্ধ্যায় খালি গায়ে স্টেডিয়াম মাতায়। অথবা সেই সকল কর্মজীবি মানুষের কথা যারা নিজের কাজকর্ম এক পাশে রেখে রাত জেগে খেলা দেখে। সেই প্রবাসিদের যাতনা যারা ক্রিকেটারদের নিজের পরিবারের পরিজনের মতই মনে করে খোজ নিতে ভূলে না, কাউকে ইনজুরিতে পরতে দেখলে মর্মাহত হয়। নির্বাচকমন্ডলীরা কি দল নির্বাচনের আগে দুইবার ভাবেন না যে খেলার সাথে শুধু তারাই না সারা দেশ, বাঙালি জাতি জড়িয়ে আছে, সাই সাথে জড়িয়ে থাকে তাদের আবেগ। কিভাবে ফর্মে থাকা জিয়া দলের বাইরে চলে যায়।



ইদানিং বাংলাদেশী খেলোয়ারদের প্রায়ই বলতে শুনি যে তাদের দিনে তারা যে কাউকে হারাতে পারে। তাহলে প্রতি দিনই তাদের দিন হয়না কেন? আর তা নাহলে তারা এই ক্রিকেট পাগল মানুষগুলোকে জানিয়ে দেয় না কেন কোন ম্যাচগুলো তাদের দিনে হবে।



কবে আসবে সে সুদিন, যেদিন ক্রিকেট পাগল জনতার হৃদয়ের রক্তক্ষরন থামবে; কবে আসবে সেই সুসময় যখন জিতে যাওয়া ম্যাচ হেরে বসে আমাদের কাদতে হবে না; কবে আসবে সেই আত্নসুদ্ধি যেদিন ক্রিকেটাররা ভূলের পুনরাবিত্তি থেকে বেরিয়ে আসবে, আমাদের হৃদয়ের ব্যাথা বুঝবে, নির্বাচকরা দল গড়তে বিচক্ষনতার পরিচয় দেবে। 

প্রতিক্ষায় সেই দিনের  ......



No comments

Theme images by merrymoonmary. Powered by Blogger.