রেকর্ডের / গিনেজবুকের পেছনে বাংলাদেশঃ মাথাটা কি আরও ভাল কিছু করার জন্য করার জন্য খাটানো যেত না?
বাংলাদেশের একটি ঊন্নয়নশীল রাষ্ট। কাগজে কলমে উন্নয়নের ফাকা বুলি আওরালেও একটা
বিরাট জনগোষ্ঠি দারিদ্রের কশাঘাতে জর্জরিত। ৩০% লোক দারিদ্রসীমার নিচে বাস কিন্তু তার
পরও এ দেশে আজব সব কর্মকান্ড চলে। সেরকম ইদানিং কালের (!) কর্ম হল গিনেজবুকে নাম লিখানো।
একটি ভাবতেই অবাক লাগে যখন সরকার এসব কর্মকান্ডে শুধু
সমর্থনই দিচ্ছে না, স্বপ্রনোদিত হয়ে নিজেরাই গিনেজবুকের পিছনে ছুটছে।
কিন্তু এতে করে লাভটা কি? জাতীয় পতাকা তৈরি করে বিশ্ব রেকর্ড গড়া, গিনেজে নাম
লিখাতে না লিখাতে এখন শুরু হয়েছে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে রেকর্ড গড়া। আর তাতে বাজেট দেখে
চোখ আমার কপালে উঠল! কোটি কোটি টাকা ব্যয়ের এ রেকর্ডে দেশের জন্য কি ফল বয়ে আনবে সেটা
মনে হয় যারা অংশগ্রহন করবে তাদের কারও বোধগম্য নয়, আমার তো নয়ই।
বাংলাদেশীরা আবেগপ্রবন। আর সেটা যদি হয় দেশের জন্য তাহলে তো আর কোন কথাই নাই।
রেকর্ড করার নামে কেউ আবার সেই আবেগ নিয়ে খেলছে না’তো। যে দেশে রাস্তা ঘাটের বেহাল
দশা, নিরাপত্তা কর্মীরা (পুলিশ) এখনো আধুনিকায়নের ছোয়া পায়নি অর্থের অভাবে, শিক্ষা
ব্যবস্থা এখনো যুগের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলতে পারছে না, নদীগুলো ধংস হয়ে যাচ্ছে
সে দেশে এই গিনেজবুকের পিছনে অর্থ ব্যয় না কররলেই নয় কি?
যে জাতীয় সঙ্গীত নিয়ে রেকর্ড গড়ার কথা বলা হচ্ছে তা বাজানোর বা গাওয়ার সময় যে
সম্মান প্রদর্শন করার কথা তা’ই তো মানুষ এখনো শিখে নি। সঙ্গীত বাজানোর সময় কেঊ দেখা
যায় পিছনে হাত দিয়ে দাঁড়ায়, কেঊ অন্য দেশের সাথে তাল মিলিয়ে বুকে হাত রেখে আবার কাউকে দেখা যায় পকেটে হাত রেখে দাড়াতে।
গিনেজবুকে নাম লিখানো যদি এতোই বড় কিছু হত, মহাভারত সুদ্ধ হয়ে যেত হল রথি মহারথি
দেশগুলো তার দখল নিতেই ছুটত। দেশের নাম উজ্জ্বল করার জন্য কিছুকরতে চাইলে আরো অনেক
ঊপায়েই করা যায়। উন্নয়নমুলক কর্মকান্ড যেগুলো দেশের মানুষের কাজে আসবে, মানুষ উপকৃত
হবে উদ্যোক্তারা এমন কিছু করে না কেন? আজ আওয়ামীলীগ রেকর্ডের পিছনে ছুটছে যাতে করে
তাদের অর্জনের খাতায় ভবিষ্যতে দেখাতে পারে। এর পর যদি বিএনপি বা অন্য কোন দল ক্ষমতায়
আসে তখন তারাও এ পথেই চলবে। আর ক্লান্তি হীন এ ছুটে চলা শেষ হবে না। যেমনি আমরা ছুটে
চলছি হরতালের পেছনে। কিছু হোক বা না হোক, ইস্যু থাকুক আর নাই থাকুক বড় দল গুলো হরতাল
দিয়ে বসে, আগে দিয়েছে, এখন দিচ্ছে আবার ভবিষত্যেও দিবে।
মূল বিষয় বাদ দিয়ে এ সকল খুদ্র বিষয়ে মাথা ঘামানো আর যা’ই হোক সরকারের কর্ম
হতে পারে না। আমাদের সবার শুভবুদ্ধির উদয় হোক, আমরা আমাদের নিজেদের এবং দেশের জন্য
ভালো কিছু যেন করতে পারি যা হবে দীর্ঘস্থায়ী, গিনেজের রেকর্ডের মত ক্ষণস্থায়ী নয়।
No comments