শাহিদ আফ্রিদির সিঙ্গাপুরের দিনলিপি
বাংলাদেশের ক্রিকেট তখন
জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে। সে সময় আশেপাশে প্রচুর লিগ হত, পড়ালেখা বাদ দিয়ে ক্রিকেটে তখন
ব্যস্ত সময় পার করতাম। জাতীয় দলের এক সময়কার ক্রিকেটার শরীফ, বিদ্যুৎ, হান্নান
সরকার সহ অনেকেই খেলত এ সব লিগে। আমাদের
দলের মধ্যমনি হয়ে থাকতেন শাহিদ আফ্রিদি। না, ভাল খেলার জন্য না অথবা ভাল সংঘঠকও
না। উনি ওপেনার হিসেবে নামার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে বসে থাকতেন। প্রতিদিনই কল্পনা
করতেন ওনার এক একটি ছক্কা সীমানা পেড়িয়ে উড়ে যাচ্ছে চম্পা, কলি আর চামিলের ছাদে। চম্পা, কলি আর
চামিলের ছাদ বাস্তবে থাকলেও
ওনার ছক্কা মারা হয়ে ওঠেনি। ব্যাটিং করতে গেলে বেশির ভাগ বলই স্ট্যাম্পে আঘাত করত,
নয়তো উইকেট কিপারের হাতে। এ জন্যই ওনার জন্য ৯, ১০ অথবা ১১ নাম্বার পজিশনটা রিতিমত
বরাদ্দ থাকত। বল হাতে স্বপ্ন দেখতেন একের পর এক গুগলিতে স্ট্যাম্প উড়িয়ে দিচ্ছেন,
চম্পা কলিরা দল বেধে বাড়ির ছাদ থেকে তার বল করা দেখছে। “শাহিদ ম্যারি মি” না হোক শুধু ব্যানার,
প্লাকার্ড দেখাচ্ছে (তাতে কিছু লিখা না থাকলেও ওনার কোন আপত্তি ছিল না);
অটোগ্রাফের জন্য ভীড় জমাক, দু’চারজন তাকে চিরকুট দিক। কিন্তু বাস্তবে... তার বলগুলো
আছড়ে পরত বাউন্ডারির পর স্কুলের দেয়ালে অথবা স্কুলের উপর দিয়ে ভেসে রাস্তার উপর।
নির্দয় ভাবে পেটাতো তার ওভারগুলো।
বড়ই মজার মানুষ স্বঘোষিত “শাহিদ
আফ্রিদি”, আমাদের শহিদ ভাই। সাপোর্ট করতেন ইন্ডিয়া টিমের কিন্তু প্রিয় খেলোয়ার
পাকিস্তানের শাহিদ আফ্রিদি। শহিদ ভাই ছক্কা হাকাতে পারে নি, পারেনি অন্যের ছক্কা
হাকানো বল কুড়িয়ে আনার নাম করে চম্পা, কলিদের সানিধ্যে যেতে।
এভাবেই দিন পার হতে থাকে।
শহিদ ভাইয়ের ছক্কা’র বল চম্পা, কলি বা চামেলিদের বাড়ির ছাদে না গেলেও চম্পা কলিরা
ছাদ থেকে উধাও হতে থাকে। কারোও বিয়ে হয়ে যায়, আবার কেউ কেউ শহিদ ভাইদের সমবয়সীদের
সাথে প্রেমে মশগুল। স্বপ্নের ব্যানার, প্লাকার্ড সজ্জিত ছাদ গুলো বিয়ের সাজে
সজ্জিত হতে থাকল একের পর এক। দিনে দিনে শহিদ ভাইয়ের অবস্থা যেন সেমি-ফাইনালে ১
রানে পরাজিত হবার পর দলের খেলোয়াড়দের মত।
শহিদ ভাইয়ের মনের
শীতলক্ষ্যা’য় যখন ভাটা, নৌকা যেন মাঝ নদীতে আটকে আছে দিশাহীন ভাবে তখনই সেই নৌকায়
বালুর ট্রলার হয়ে ধাক্কা দিয়ে গেলে এলাকায় নতুন আসা মিলি আপু। পাওয়ার-প্লেতে
নো’বলে আউট হবার পর যেন মনের আকাশে ফ্রি হিট। ক্রিকেটের দারুনভক্ত মিলি আপুই হয়ে
গেল নতুন আশ; চম্পা , কলি আর চামেলিদের হারিয়ে শহিদ ভাইয়ের শেষ ভরসা।
মিলি আপুর সুবাদে তার ছোট
ভাই হয়ে উঠল সবার আদুরে ভাই। কিছুকাল চলল এভাবেই। শহিদ ভাইও হাই হ্যালো থেকে কিছু
দূর এগুলো। শহিদ ভাইয়ের মনের প্রফুল্লতার ছিটে ফোটাও তার মাঠের খেলায় ফুটে উঠত না।
ছক্কা আর গুগলি স্বপ্নের দোলাচালেই দুলতে থাকে।
একদিন বিকেলে অপুর হাতে
চিরকুট দেখে আমাদের যেন ভিআইপি বক্সের টিকেট পাবার মত অবস্থা। সোজা সাপ্টা অপুর
মিলি আপুর চিরকুট দিয়ে যা বলল তাতে শহিদ ভাইয়ের মামলা আইসিসি’র কোর্টে ওঠার আগেই
যেন আজীবন নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়ে গেল, আমরা হারিয়ে ফেললাম আমাদের ক্রিকেটার “শহিদ আফ্রিদি”
কে। মিলি আপুর চিঠিখানা শহিদ ভাইয়ের হাতে ধরিয়ে দিয়ে অপু বলল “মিলি আপুর চিঠি, আপু
বলছে আপনাকে দিতে যাতে সৌরভ ভাই চিঠিটা পায়।”
সৌরভ ভাই, আমাদের
ক্যাপ্টেন; ওপেনিংএ ব্যাট করেন। তার মারা এক একটি ছক্কা আছড়ে পড়ত চম্পা, কলি বা
চামেলিদের বাড়ির ছাদে। তার ইয়র্কারে মিলি আপু ক্লিন বোল্ট, আর বাউন্সারে শহিদ ভাই কুপোকাত।
শহিদ ভাই দেশ ছাড়লেন,
পাড়ি জমালেন সিঙ্গাপুর। ক্রিকেটের নেশায় মত্তথাকা শহিদ ভাইকে ক্রিকেট আর বিন্দু
মাত্র টানত না। এখন পাড়ার ক্রিকেট আগের মত নেই। চম্পা, কলি আর মিলি আপুদের ছেলেরা এলাকার
রাস্তার, মাঠে ব্যাট নিয়ে ঘুরে বেড়ায় আর শাহিদ আফ্রিদি ...। শহিদ ভাই ক্রিকেটের মাঠে দাপুট দেখাতে না
পারলেও কর্মস্থলে তার কর্মদক্ষতা তাকে নিয়ে যাচ্ছে ভিন্ন স্তরে।
এইতো সেদিন তার এক
সহকর্মী (পাকিস্তানি সাপোর্টার) বলে বসল “কাজের দিক দিয়ে শহিদ ভাই, আমাদের
কোম্পানির শাহিদ আফ্রিদি”। যানি না এটা শোনার পর ওনার কেমন অনুভুতি হয়েছে।
বাংলাদেশ
টিম, দারুন খেলছে। দেশে বিপিএল এর উন্মাদন, তাতে গা ভাসাচ্ছে ছোট বড় সবাই। দেশি বা
প্রবাসী সকল বাংলাদেশীই খোজ নিচ্ছে বিপিএল এর। চার ছক্কা আর হ্যাট্রিকের আলোচনায়
মজতেছে। এর বাইরে সুধুই আমাদের শহিদ ভাই, শাহিদ আফ্রিদি। আছি অপেক্ষায় তার মাঝে
আবার আগের উন্মাদনা দেখার।
No comments