“মাঠে
মাঠে বাতাস ফিরে মাতি,
বৃথা স্বপ্নে কাটল সারা রাতি।
হায় রে, সত্য কঠিন ভারী,
ইচ্ছামত গড়তে নারি--
স্বপ্ন সেও চলে আপন মতে,
আমি চলি আমার শূন্য পথে।”
রবি ঠাকুরের স্বপ্ন আপন মতে এবং তিনি নিজে শুন্য পথে চললেও তার সৃষ্টি যে তাকে
স্বপ্নাতীত সাফল্যমন্ডিত করেছে তা বলাই বাহুল্য। ভবিষ্যৎ নিয়ে মানুষের কল্পনা ও
আকাঙ্খা তাই প্রতিনিয়তই পরীলক্ষিত হয়। ব্যর্থতায় তা অনেকের কাছে পরিগনত হয়
দ্বিবাস্বপ্নে। তবে স্বপ্ন বা কল্পনাই ভবিষ্যৎ জীবনের নতুন পথের সন্ধান দেয়।
স্বপ্ন ভবিষ্যতের ছবি দেখিয়ে ব্যক্তিকে শক্তি ও সাহস যোগাতে পারে, যা শিল্প, সাহিত্য, সঙ্গীত ও নব নব আবিষ্কারের
দ্বার উন্মোচনে সহায়ক। কিন্তু স্বপ্নের
সৃষ্টিশীলতার প্রয়োগিক দিক কতটুকু, সপ্নালোকের আহ্বানে সাড়া দিতেই বা আমরা কতটা
প্রস্তুত। আমার মত অনেকেই হয়তো আছে যাদের স্বপ্নদেখাটাই স্বপ্ন, মানে নির্দিষ্ট
কোন স্বপ্ন নেই, অথবা দুর্বোধ্য নিজের কাছে। কিছু স্বপ্ন বাদুরে ঝোলার মত
ঝুলতে আর দুলতে থাকে। কিছু বিলিন হয়ে যায় জমাট বাধার আগেই। আবার
কিছু স্বপ্ন স্বপ্নের চেয়েও স্বপ্নময়। স্বপ্ন- সত্যিই এক আজব
জিনিস। চারপাশের মানুষগুলোর স্বপ্নতাড়িত অবয়ব দেখে প্রতিনিত উতসাহ পাই স্বপ্ন
দেখার।
পড়াশোনার পাঠ
চুকিয়ে সিনিয়র ভাইরা সবাই যখন দেশবিদেশে কাজ করে পকেট ভারী করছে, তখন তাদেরই
একজনকে দেখেছি ছাত্রাবাসে উচ্চশিক্ষার অপেক্ষায় দিনাতিপাত করতে। অনেককেই দেখেছি
ভিন্নভাবে নিতে, ডিপ্লোমাকে ভিত্তি করে সেই একজন আজ অষ্ট্রেলিয়াতে
ডক্টরেট করতেছে। ইচ্ছাশক্তি, সুযোগ বা সাহস
যে হিসেবেই তাকে প্রকাশকরি না কেন, তা আসলে স্বপ্ন তাড়না।
(টি এম রবিউল ইসলাম, থামাতে পারে নি যাকে কিছুই উচ্চশিক্ষার উচ্চ শিখড়ে পৌছানোর
স্বপ্নপূরনে)
সেই
ছাত্রাবাসেই আবার আর একজন কে দেখেছি গানের রাজ্যেবিচরনের নিরন্তন প্রচেষ্টা
। শত প্রতিকুলতাকে ঠেলে
প্রবাস জীবনের ব্যস্ততার মাঝেও তার গান চর্চা অব্যাহত আছে, বেরুচ্ছে একটির পর একটি
এলব্যাম। স্বপ্নালোকের ছোয়া ছাড়া এ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকত কিনা তা সেই শিল্পীই
বলতে পারবেন।
(রুবেল, প্রবাসের সব ব্যস্ততা, প্রতিকুলতার মাঝে প্রকাশ করল “যাত্রা অচীনপুর” নামে তার দ্বিতীয় এলব্যাম।)
প্রবাসে প্রতিটি মানুষের মাঝে প্রতিনিয়তই স্বপ্নবাসের বিষয়গুলো দেখে মুগ্ধ হই। অনেকের ছোট ছোট স্বপ্ন পূরনের উচ্ছ্বাস আরোও বেশি আন্দোলিত করে, তখন স্বপ্ন দেখি আরোও অনেকের স্বপ্নপুরনের সাক্ষী হতে, উচ্ছ্বাসে উচ্ছ্বসিত হতে। সাদামাটা একটা স্বপ্ন এবং তার পূর্নতা যে কতটুকু শক্তি বা মনোবল জোগাতে পারে তা কল্পনাতীত। আবার দিন বাড়ার সাথে সাথে অনেকের অনেক স্বপ্ন ঝাপসা হয়ে যায়। স্বপ্ন নামের আশার পিছনে ছুটে চলার গতি ধীর থেকে ধীরজ হয়ে যায়। স্বপ্ন ভঙ্গের ভয়ে স্বপ্নতাড়না থেকে পালিয়ে বেড়ানো কি আদ্যোও সম্ভব? তাই বলে কি স্বপ্ন দেখা থেকে দূরে থাকা যাবে, স্বপ্নের রঙ্গিন জগতের ছোয়া ছাড়া কি বাচা সম্ভব? স্বপ্নহীন ভাবে বাচার মধ্যে কোন শান্তি নেই কিন্তু আবার দুঃখও নেই। স্বপ্ন প্রেরনা দেয় বাচার, উদ্যোগী হবার, সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচনের। স্বপ্নীল জীবনের সুত্রপাত স্বপ্ন দেখা থেকেই। আর বাচার জন্য স্বপ্ন যেহেতু দেখতেই হবে, তাহলে বড় স্বপ্ন দেখাই শ্রেয়। স্বপ্নের সম্মোহনি শক্তিতে উদ্ভাসিত হোক প্রতিটি প্রবাসির জীবন, ঝুলে থাকা স্বপ্ন গুলো বর্ধিত হোক, নিভু নিভু স্বপ্নগুলো আলোর মুখ দেখুক, স্বপ্ন পুরনের উচ্ছ্বাসে উচ্ছ্বসিত হোক দিকবিদিক, পূর্ন হওয়া স্বপ্নগুলো ধাবিত করুক নতুন কোন স্বপ্ন দেখার স্বপ্নীল পথে।
No comments