আমাদের জুবের ভাই


আমাদের জুবের ভাই, চমৎকার একজন হাসি খুশি মানুষ ছিলেন। বাইরে তাকে যে যাই ভাবুক ভেতরে সহজ। এজন্য তাকে অনেক সমস্যায় পড়তে হত।  অনেকে বলত সে নাকি বউ এর অধিনস্থ ছিল, কিন্তু আমার কাছে মনে হত সে তার স্ত্রীকে একটু বেশীই ভালবাসত অথবা হুকুম পালন ছাড়া তার অন্যকোন পথ খোলা ছিল না।


জুবের ভাই কথন ১

ইউপি নির্বাচনে জুবের ভাইকে একবার  সাপর্র্ট  করে পাশ  করিয়ে ছিলাম. এর পর জুবের ভাইয়ের থেকে আমাদের দাপটই বেশি ছিল. সামাজিক বন্ডিং এর নাম করে অনেককে এলাকা ছাড়া, সভার সিধান্ত নেওয়া সবই করতাম আমরা. যারা জুবের ভাইকে সিত্য্কারের সমর্র্থন দিত তাদেরকে  "রংবদলাইছে" তকমা দিয়ে জুবের ভাই থেকে দূরে  ঠেলে নিজেদের  জোর আরো বৃদ্ধি করছি. ভাই নিরবে সব দেখে যেত আর   সায় দিয়ে যেত হয়ত নির্বাচনী সমর্র্থনের কৃতজ্জতায়  অথবা ভবিষ্যতে আবারও বিজয়ী হবার আশায় অথবা বন্ডিং থিওরীর  মারপ্যাঁচে. মিটিং গুলাতে সমর্র্থনহীন জুবের ভাইয়ের অসহায় মুখশ্রী এখন কিছুদিন যাবত মনে পড়তেছেজুবের ভাইয়ের সত্যিকারের সমর্থকরা এভাবেই হারিয়ে যাবে .....
 জুবের ভাইও একদিন বুঝবে কিন্তু সবকিছু হারিয়ে ........


জুবের ভাই কথন ২

জুবের ভাইএর কথা মনে পড়ে যায়, ক্ষমতায় ছিল কিন্তু আশেপাশের সবাই লাঠিমের মত তাকে ঘুরাত. জ্বালা যন্ত্রণার  মাঝেও তাকে হাসতে হত বাধ্য হয়ে. কষ্টে ছিল জুবের  ভাই. জুবের ভাইয়ের দুরস্ত আন্তীয় নির্বাচনী প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে ধরা খেয়েছিল এবং মুচলেকা দিয়ে বেচে যায়। জুবের ভাই পাশ করার পর সেই আত্নীয় নেপথ্য কাজ করতে থাকে। যাদেরকে বিরুদ্ধাভাবাপন্ন মনে করেছিল তাদের সবাইকে উকিল নোটিশ, হয়রানি এমন কোন কিছু করা বাদ রাখে নি। তবে সব কিছুতেই স্বাক্ষর থাক্ত যুবের ভাইয়ের। 


জুবের ভাই কথন ৩

একদিন জুবের ভাইয়ের নির্বোধ আত্নীয়ের মূল খুজতে যেয়ে ভিন্ন আর এক পৃথিবী দেখলাম। সেই আত্নীয়কে চালাচ্ছে গুটিকয়েক পরামর্শদাতা যাদের অনেকেই নির্বাচনী প্রচারনায় জুবের ভাইয়ের প্রকাশ্য বিরোধী ছিল। মানে আর কিছুই না, জুবের ভাইকে হেয় করার চূরান্ত প্রচেষ্টা আর ভবিষ্যতের মাঠ দখল।


জুবের ভাই কথন ৪

জুবের ভাই একবার "আনন্দ আয়োজন" এর উদ্যোগ নিতে বললেন। দায়িত্ব দেওয়া হল "তাড়া সামাদ" কে। এই "তাড়া" আকাশের তাঁরা না। অনুষ্ঠান থেকে লোকজনকে তাড়িয়ে দিতে ভীষন পটু। নিমন্ত্রন কার্ড বিহীন কারোও প্রবেশের জো নেই।  এ জন্যই সামাদ কে "তাড়া সামাদ" বলে ডাকত। "তাড়া সামাদ" অনুষ্ঠানকে এতোই জগা খিচুড়ি বানিয়ে ফেলেছিল যে সব অতিথি হাসছিল। আর সামাদকে পায় কে। সবাইকে হাসতে দেখে সে তো মহা খুশি। অনুষ্ঠানে জুবের ভাইএর বউ সারাক্ষন মঞ্চ দখল করে রেখেছিল। তার এতটাই দাপট ছিল যে বাইরের প্রতিষ্ঠত শিল্পিরা পার্ফম করার সুযোগই পায় নি। বেচারা জুবের ভাই, সারাটা সময় এবং পরের কয়েক দিন মুখ ভার করে ছিল । কিন্তু করার কিছুই ছিল না। 


জুবের ভাই কথন ৫

জুবের ভাই কোথায় কি করছে , কি বলছে তা ভেবে দেখত না। চ্যারম্যন হিসেবে এলাকার যুবক্লাবের তিনি সভাপতি (পদবলে)। উল্লেক্ষ্য ক্লাবটি অনেকদিন আগে ভিন্ন ধর্মীয় এক লোকের দ্বারা প্রতিষ্ঠত এবং সবাই একসাথে নানা বিষয়ে সহজ সমাধানে পৌছাত। উন্নয়নমূলক কাজ করত, খেলা দেখত, আড্ডা দিত। কিন্তু জুবের ভাইএর কল্যানে ওখানে ঢুকে পরল রাজনীতি। প্রথমেই সঙ্খালঘু হটাও। তারপর বিবেধ, ঝগড়া। অতঃপর তা মেটানোর জন্য আলোচনা এবং সমাধান। কিন্তু পরদিন দেখা গেল কাল্বে তালা। শুধু তা ই না, ক্লাবে পুলিশ প্রহরা। কেউ তালা ভেঙ্গে ঢুক্তে গেলেই উকিল নোটিশ অথবা জেল। পোকার ভয়ে ফসল করাই বন্ধ।



জুবের ভাই কথন ৬

জুবের ভাইয়ের আগে যিনি ওই পদে ছিলেন তার একটা ভিন্ন দাপট ছিল সভা সমাবেশে। তখন আশে পাশের এলাকার নেতাদের একটা মিটিং হত প্রতিমাসে। জুবের ভাইতো "ইয়েস টাইপ" ওরা যা বলে হাসে অথবা ইয়েস বলে শেষ। কখনো কখনো সহমত পোষন করে নিরব থাকে। ছেড়ে দে মা কেদে বাচি অবস্থা। নেতা হয়ে ও জ্বালা, না হয়েও জ্বালা। জ্বালায় জ্বালায় ঘুম হারাম


জুবের ভাই কথন ৭

জুবের ভাইয়ের আত্নবিশ্বাস ছিল বর্তমান ক্রিকেট দলের চেয়েও অনেক বেশি। অবশ্য এ জন্য আমারাই দায়ী ছিলাম। ওনার ধারনাগুলোকে এমন ভাবে রঙ মাখিয়ে ছিলাম যে সে নিজেকে কিং মনে করতে লাগছিল মাঝে মাঝে তা বলেও ফেলত, "তুমি জান, আমিই বস"। আপনি একাই একশ , এটা তার মনে খুব ভাল জায়গা নিয়েছিল। আর তাতে সে সবাই কে তাচ্ছিল্ল্য করত সবাইকে। এতে তার তার বিপত্তি ঘঠত পদে পদে । 


জুবের ভাই কথন ৮

জুবের ভাই মুহূর্তে কথা বদলে ফেলত। কাউকে এখনই শত্রু ট্যাগ দিত আবার পর মূহুর্তে চরম বন্ধু বলে জাহির করতে দ্বিধা করত না। জুবের মিয়া ভাবত যে সে'ই একমাত্র চালাক ব্যাক্তি । আর তার মনে এই কথা বদলানোটা হল নেতৃত্বের বড় গুন যা নেতাদের মধ্যে থাক্তেই হবে। কিন্তু অন্যদের কাছে তার এ গুন*  কপটতার লক্ষন বলেই প্রতয়মান হত।


জুবের ভাই কথন ৯

জুবের ভাই সিদ্ধান্ত নিতে পারত না বা মূহূর্তেই তার সিদ্ধান্ত বদলে যেত নতুন কোন ধারনা পেলেই। তাই আমাদের সভাতে যে সকল সিদ্ধান্ত হত সবই মেনে নিত। কিন্তু সবাই জানত এ সিদ্ধান্ত ধোপে টিকবে না , কারন তার বস (বউ) সব সিদ্ধান্ত নতুন করে দেবে এবং সেও হুজুর হুজর করে সব মেনে এসে পরের সভার আগেই তা উদ্গিরন করবে , দরকার হলে আলাদা আলাদা করে সরি বলবে যাতে সভাতে পস্তাতে না হয়। জুবের ভাইকে দিয়ে উলটা পালটা কিছু করার সহজ রাস্তা ছিল তার বউএর নামে সুনাম করা অথবা বউ এর ভয় দেখানো। 


জুবের ভাই কথন 10 : মতভেদ ও দূরত্ব

জুবের ভাই বিপুল ভোট নির্বাচিত হওয়ায় তার উপর বিশাল চাপ ছিল তদনুসারে কাজ করার. মেম্বার 4 জন ছিল তার সমর্থিত. কিছুদিন যেতে না যেতেই জুবের ভাই আটকে যায় তিন মোড়লের ফাঁদে. জুবের ভাই পরিকল্পনা মাফিক কাজ বাদ মোড়লিয়ানা'র আবদার মেটাতেই হিমশিম, চোখে তার দ্বিতীয়বার চেয়ারম্যান হবার স্বপ্ন. বদলে যাওয়া জুবের ভাইয়ের সাথে দূরত্ব তখন স্পষ্টতই প্রতীয়মান. পড়াশোনার চাপ, ক্লাব আর মূলধারার রাজনীতি এই দূরত্বকে ত্বরান্বিতও করে. এলাকা বিভাজনে আমি তখন পৌরসভার বাসিন্দা. জুবের ভাইয়ের প্রকাশ্য সমর্থক তখন শূন্যের কোঠায়, ভাল-মন্দ সকল কর্মই প্রশ্নবিদ্ধ. মূলকর্মপন্থা থেকে বিচুত্যি তাকে অগ্রাহ্য করতে সহায়তা করে.


আমরা ততদিনে মূলধারার ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে নেতা বনে গেছি. জুবের ভাইয়ের সাথে দূরত্ব যোজন যোজন.




জুবের ভাই কথন 11 : উদ্বাস্তু সমাচার 

এলাকার কটন মিল আবার পুরোদ্দমে চালু হয়েছে. এলাকা বিভাজনে কটনমিল জুবের ভাইয়ের উনিয়ন পরিষদের অধীনে ছিল. মিলের ভেতরে বছরের পর বছর থাকা ভিন্ন এলাকার লোকগুলো ওই এলাকায় ভোটারে পরিণত হয়. এতে বহিরাগত ভোটারের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছিলো ব্যাপক হারে. এ অনুপ্রবেশকেরী ভোটারদের মতাদর্শ সম্পূর্ণ ভিন্ন - "শিকড় আর রক্ত ভিন্ন" এ মূলমন্ত্রে তারা বিশাস করতো. যদিও স্থানীয় লোকজন তাদেরকে নিজেদের লোক হিসেবেই জানতো. নিন্তু তার সবসময় ব্যবধানের দেয়াল খাড়া রাখতো , কখনো  প্রকাশ্যে আবার কখনো অগোচরে (যদিও ভিন্নতা ছিল অনেকের মাঝেই, মননের পরিচয় ছিল সেখানেই ) এ অনুপ্রবেশকারীরা একতাবদ্ধ থাকতো যে কোন সিদ্ধান্তে এবং তাদের থেকে কেউ একজন চেয়ারম্যান হবে এ লক্ষ্যে গোপনে কাজ করে যেত. এ অনুপ্রেবেশকারী উদ্বাস্তুরা পরবর্তী নির্বাচনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে. যদিও মূল লক্ষ্যার্জনে ব্যর্থ হয়. 




জুবের ভাই কথন 12 : উত্তরসূরি নির্বাচন 


জুবের ভাই সাবের ভাইকে পছন্দ করতেন. কিন্তু নির্বাচনকালীন তিক্ত অভিজ্ঞতা দুজনের মাঝে বিভেদ তৈরী করে. দু'দফা চেয়ারম্যান হয়ে জুবের ভাইএর সিদ্ধান্ত নির্বাচন না করার. উত্তরসূরি নির্বাচনে তার প্রথম পছন্দ সাবের ভাই. এর পিছনে ফাটলে যাওয়া সম্পর্ক জোড়া নেওয়া না সহানুভূতি কোনটার প্রভাব বেশি তা জুবের ভাইই ভালো বলতে পারবে. সাবের ভাইকে আমরাও চাইতাম কিন্তু অন্তরালের চাপ সাবের ভাইয়ের উপর এতোই বেশি ছিল যে তার মতো বিচক্ষণ ব্যক্তিও সেই চাপ ঢেলে নিজেকে মেলে ধরতে পারে নি. সাবের ভাই ততদিনে কুমিল্লাতে থিতু. এ পথ আর মাড়াচ্ছে না . অগ্যতা আমাদের পছন্দ ছিল নেতৃত্বগুন সম্পন্ন আরিফুল ভাই, যদিও মতাদর্শে কিছুটা তফাৎ ছিল  . যদিও ব্যক্তি জীবন ছিল প্রশ্নবিদ্ধ এবং এতে আমাদের তার সমর্থনে ঘাম ঝরতে হয়েছিল. আরিফুল ভাই পরিষদের চেহারা বদলে দিয়েছিলেন . সে স্মৃতিরোমন্থন আর একদিন হবে.


জুবের ভাই কথন 13 : তারেক ভাইয়ের তাগাদা 


দান নেওয়া  বা ধার নেওয়ার যে কি বিপত্তি তা তারেক ভাইয়ের থেকে যে নিয়েছে সে হারে হারে বুঝতো. উনি বলতো এভাবে "ও আজকে এই সেই কিন্তু বলতে চাই না যে সে আমার ধারের টাকায় পড়াশোনা করছে" অথবা "উমুকের চিকিৎসার জন্য এতো টাকা উঠায়ে দিচ্ছে, তুমুকের ঘর ঠিক করতে এতো টাকা জোগাড় করছি, কিন্তু চেয়ারম্যান পারে নি" . অনুদান জোগাড় করতে ভাইয়ের তাগাদায় অতিষ্ট হয়ে সবাই ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা . ওনার শখ জাগলো চেয়ারম্যান হয়ে আরো বেশি দানশীল হবে. আর যারা দান করে তারা ভাবে চেয়ারম্যান হবার পর বছরে কতবার দানের তাগাদা পাবে. জুবের ভাইয়ের বিরোধীরা জড়ো হয়েছিল তারেক ভাইয়ের গোদায় তবে দূরত্ব সৃষ্টি করতো সেই দানের তাগাদা. নির্বাচনী প্রলাপ নিয়ে আসছি পরে.



বি.দ্র.: ঘটনা সত্য মিথ্যা যাচাই করতে না যাওয়াই  ভালো। তবে মিল খুজতে গেলে নিজ দায়িত্বে খুজুন


আরিফুল, তারেক, সাবের বা জুবের
আপনারা ছিলেন আমাদেরই ভাই
সুখে দুঃখে আনন্দ বিনোদনে
আপনাদের আগের মতোই পাশে চাই


(চলছে ... চলবে ...।)

No comments

Theme images by merrymoonmary. Powered by Blogger.