ফিরে দেখা প্রবাস জীবনের কিছু কথা
প্রবাসে পাড়ি জমাব কখনো স্বপ্নেও ভাবি নি। জীবিকার তাগিদে গৃহ পরিজন ছেড়ে অগ্যতা পরবাসের খাতায় নাম লিখাতে হল। প্রথমদিকে ব্যাপেরটা বনবাসের মতই লাগত। একজন প্রবাসী প্রতিদিনই নিত্তনতুন ঘটনার সম্মুখীন হয় , অভিজ্ঞতার ভান্ডারও বৃদ্ধিপেতে থাকে সেই সাথে। এভাবেই কেটে গেছে বেশ কয়েকটি বছর।
প্রবাস জীবন শিখিয়েছ কিভাবে কিভাবে আশেপাশে ঘঠে যাওয়া অনেক কিছুকেই এড়িয়ে জীবনযুদ্ধে এগিয়ে যেতে হয়।
নিরাশার অতল গহ্বরে হারিয়ে যাওয়া ছেলেটা যাতে যাত চেপে, চোখের নোনাজলকে উপেক্ষা করে বলতে শিখিয়েছে “আমি ভাল আছি মা, তোমরা ভাল আছ তো?”
ভাল রান্নার খাবারও পছন্দ না করা সেই ছেলেই তামিল ইডলি, বডে এমনকি অনেক অখাদ্যকে অমৃতসুধা মনে করে খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে।
ঘর থেকে বেরুলেই যার রিক্সা লাগে, তাকে এখন স্বচক্র যানে বা দ্বিচক্র যানে পাড়ি দিতে হয় অনেক পথ।
মায়ের আচল তলে বেড়ে ওঠা ভীতু সন্তান হাজার মাইল দূরে নির্ভিক দিবানিশি কাটায় শুধুমাত্র প্রবাসী বলেই।
নরম বিছানায় গা এলিয়ে দেওয়া তখন স্বপ্নের সম্ভব হয়। কারন নরম বিছানের জায়গা কাঠের তক্তা দখল করে নিয়েছে।
সকালে ঘুম থেকে উঠাতে যাকে বাড়ি শুদ্ধু লোককে ডাকা ডাকি করতে হত , প্রবাসী হবার কারনেই তাকে সূয্যিমামার আগেই জেগে উঠতে হয়।
জ্বর ঠান্ডাকে পিছনে ফেলে রোদ বৃষ্টিকে পিছনে ফেলে এগিয়ে যায় স্বউদ্দমে
একসময় বন্ধুদের নিয়ে অস্থির জীবন যাপনে অভ্যস্থ ছেলেকে অন্য এক অস্থিরতায় পেয়ে বসে, আর তা হল বিদেশে আসার ধার দেনা ফেরত দেওয়ার অস্থিরতা। প্রতিটি টাকা খরচ করতে তাকে দু’বার ভাবতে হয়।
দেশে যে ছেলে কোন কাজই করে নি, প্রবাসে তাকেই একটি রবিবার কাজে বন্ধ দিলে হতাশায় পেয়ে বসে এই ভেবে যে –এ মাসে টাকা কম আয় হবে। অথচ তাকে বেমালুমই ভুলে যেতে হয় যে সপ্তাহের ৬ টি দিন সকাল ৭ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত কাজ করেছে।
ছাত্ররাজনীতির মাঠে বীরদর্পে প্রদক্ষীণ করা ছেলেগুলোই রাজনীতির ভেদাভেদ ভূলে, প্রতিহিংসাকে পিছনে ফেলে “বাংলাদেশী” পরিচয়ে এগিয়ে চলে। বিপদে ভাই বন্ধুর মত পাশে দাঁড়ায়।
সারা দিন কাজের শেষে রাত জেগে পড়াশোনায়ও ক্লান্ত হয় না, ভোর না হয়েই বেড়িয়ে পরে কর্ম স্থলে। প্রবাসীর এ উদ্দম দেখে ঘড়ির কাটা নিজেই যেন ক্লান্ত হয়ে পরে।
শত কষ্ট, ব্যস্ততার মাঝেও প্রবাসীদের খুশিহতে খুব বেশী কিছু লাগে না। দেশে সবাই ভাল আছে , তার হাসি মাখা কন্ঠস্বরই ভরিয়ে দেয় প্রবাসীদের প্রান।
প্রবাসে চরিত্র গুলো ভিন্ন হতে পারে কিন্তু তাদের জীবন যুদ্ধ, গল্পকথা মোটামুটি একই রকম। প্রতিটি জীবনই প্রবাসে এসে বদলে যায়, সজ্জিত হয় সম্পুর্ন এক নতুন ধাচে।
প্রবাস জীবন শিখায় জীবনকে উপলব্ধি করতে, শত বাধা উপক্ষা করে এগিয়ে চলতে। আর “আদু ভাই” এর মত আমি / আমরা শিখে যাচ্ছি বছরের পর বছর। এ শিক্ষা জীবনের শেষ কোথায় কে জানে।
(নিবন্ধটি প্রথম আলোতে প্রকাশিত হয় ২০/০১/২০১৫ এ)
No comments