প্রথম বার রক্তদান – সিঙ্গাপুরের আরেক পৃথিবীর সাক্ষাত

    
সিঙ্গাপুর – যান্ত্রিকতার আর এক নাম, রোবটিক জীবন ধারায় মগ্ন এ দেশবাসি। এদেশের লোকজনকে দেখেছি সব সময় নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকতে। অন্যের দিকে ফিরেও তাকানোর সময় তাদের নেই বলেই মনে হত। যখন পড়াশোনা করতাম, তখন কাজ আর পড়াশোনায় সময় পেরিয়ে যেত। পাঠ চুকানোর পর কাজের সাথে ভিন্ন কিছু করতে ইচ্ছে হলে। আর খুজে খুজে ঠিক করলাম ভলান্টিয়ার হলে মন্দ হয় না, সেই সাথে রক্ত দান কর্মশুচিতেও অংশগ্রহন মহৎ কাজ বলেই গন্য হবে
অনেকদিন থেকেই রক্তদানে শরিক হব বলে ভাবছিলাম। সময়, সুযোগ আর রক্তগ্রহনের দিনক্ষন এক করতে পারছিলাম না। যা হোক অবশেষে গতকাল সব এক সাথে মিলে গেল।
অফিস থেকে চলে গেলাম ডোনেশন সেন্টারে। এদেশে রক্ত গ্রহন করে অনেক সংস্থা কিন্তু সবই “স্বাস্থ্য বিজ্ঞান কর্তীপক্ষ” এর অধীনে
রক্ত নিতে তাদের কত আয়োজন, আয়োজকদের উৎসাহ আর সেবা যেন পাঁচ তারকা হোটেলের সেবাকেও হার মানায়। নিবন্ধন শেষে দেওয়া হল লম্বা প্রশ্নপত্র। প্রশ্নপত্র দেখে মনে হল এসএসসি’র নৈব্যিত্তিক প্রশ্নপত্রকেও হার মানাবে। আসলে ডোনারকে রক্তদানের বিস্তারিত তথ্যপ্রদানই এর মূখ্য উদ্দেশ্য। 


এর পর প্রশ্নগুলো ঠিক মত বুঝেছি কিনা এবং সেই সাথে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হল ডাক্তারের কাছে।
পরের ধাপে হল রক্ত পরীক্ষা। যথারীতি ফলাফল ভালই হল। এর পরই এল সেই কাঙ্খিত মূহুর্ত। যার জন্য অপেক্ষমান ছিলাম অনেক দিন । 


ওমা সেখানেও নানা আয়োজন। সঠিক নালী নির্নয়, রক্তগ্রহনের জায়গাটা দু’তিন রকমের তরল দিয়ে ধৌত, তার পর ব্যাথা নাশক ইঞ্জেকশন দেওয়া হল। এর পরই নেওয়া শুরু হল রক্ত।

রক্ত দিতে না যতটা ভাবছি তার চেয়ে অনেক বেশি ভাবছিলাম প্রতিটি স্তরে তাদের ব্যবহার। ইচ্ছা হল আরোও কিছুটা জানব রক্তের বিষয়ে। 


তখনি অবাক হলাম। এখানে যে লোক গুলো ব্যস্ত ছিল ডাক্তার আর নার্স বাদে বাকি সবাই ভলান্টিয়ার। আর তাদের সংখ্যাটা নিত্তান্তই কম না।  সিঙ্গাপুরের যান্ত্রিক জীবনের আড়ালে আরোও একটা জীবন আছে, আছে অন্য রকম একটা পৃথিবী তা অনেক দিন অজানাই ছিল। এ দেশে  এখনো অনেক লোক আছে এ জগতে যারা অবিরাম অন্যের সাহায্যে নিজেকে বিলিয়ে দিচ্ছে। ঘরের খেয়ে বনের মোষ তারাতে গিয়েও এতটা নমনীয় (ভদ্রতার শেষ সীমা বলা চলে) হওয়া যায় তা কম্পনাতীত। এদের অনেকেই নাকি এভাবে সেবা দিচ্ছে বছরের পর বছর। কেউ পুরনো জিনিস পত্র সংগ্রহ করে রিসাইকেল করে তা থেকে প্রাপ্ত অর্থ ব্যয় করছে এসব সংঘঠনে। কেউ কেউ বৃদ্ধদের আবাসস্থল পরিস্কার, রঙ করার কাজে নিয়োজিত কেউ বা আবার শিশুদের নিয়ে কাজ করে। 


 এসকল ভলান্টিয়ার যেমন আছে কৈশোর পেরনো ছেলে মেয়ে, মাঝবয়সী আবার বৃদ্ধ-বৃদ্ধা। মানব সেবাই যেন তাদের সবাইকে এক সুতোয় গেথে দিয়েছে।  মনুষ্যত্বের পরিচয় এখানেই। আর এ কারনেই যুগে যুগে দেশে দেশে মানবতার জয় পরিলক্ষিত হয়।   

আমার দেশে যে এমন কিছু হচ্ছে না তা কিন্তু অস্বীকার করছি না। কিন্তু এতো পরিকল্পনা মাফিক আর স্বপ্রনোদিত অংশগ্রহনটা দেখা যায় না। দেশে ছাত্রছাত্রীরা যে পরিমান অলস সময় কাটায়, শুধু তারা কেন এমনকি পড়াশোনা শেষ করে চাকুরীর অপেক্ষমাণরাও এই তালিকায়।


স্বপ্নদেখি আমার দেশেও এমন উদ্যোগ শুধু কোন উপলক্ষকে কেন্দ্র করে নয় বরং পরিকল্পনা মাফিক এবং সারা বছর ধরে হবে। এভাবেই যেমন উপকার হবে অসহায় লোকের তেমনি ভ্রাত্বৃত্ববোধ দৃঢ় হবে। সেই সাথে যুব সমাজকে রক্ষা করবে বিপথগামী হতে।  

No comments

Theme images by merrymoonmary. Powered by Blogger.